কোটা নিয়ে যত কথা /quota system




উপক্রমণিকাঃ
ইংরেজি  “Quota” শব্দটির অর্থ ‘Proportional Share’, যার অর্থ অনুপাতিক অংশ।‘ Quota’ শব্দটি বাংলা ভাষায় বহুল ব্যাবহারের  কারণে বিদেশি শব্দ হিসেবে বাংলায় এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে শিক্ষিত- অশিক্ষিত নির্বিশেষে সবার  এ সংক্রান্ত  কোনো  শব্দ  ব্যাবহারের আবশ্যকতা দেখা দিলে ‘Quota’র বাংলা অর্থ  অনুপাতিক অংশ উল্লেখ না করে প্রত্যেকে  Quota’ শব্দটি  ব্যবহার করে  থাকে।
কোটা  ব্যবস্থা কিঃ
 কোটা ব্যবস্থা বর্তমান সময়ে অতি  পরিচিত শব্দ। এটি  যদিও  একটি  বিদেশি  শব্দ  তবুও ব্যবহারের  দিক  থেকে  বাংলা  ভাষার অতি  পরিচিত  শব্দ হিসেবে বাংলা ভাষায় এমন ভাবে  মিশে গেছে  যে, চাইলেও একে বাংলা  থেকে  মুছে ফেলা  সম্ভব নয়।
কোটা ব্যবস্থা হল  সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী বা অনগ্রসর  সমাজের অবস্থার   পরিবর্তন করার  জন্য তাদেরকে  অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানের  ব্যবস্থাই  হল কোটা ব্যবস্থা। কোটার ব্যবস্থার  মূল   লক্ষ হল  পিছিয়ে  পড়া জনগোষ্টির অবস্থার  পরিবর্তন বা অবস্থার উন্নতি করা।
কোটা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
Ø একটি বহুমাত্রিক সমীকরণ কাঠামো ।
Ø কোটার সাথে বিভিন্ন জেলা বা বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা পদ্ধতিটিকে একটি জটিল রূপ দিয়েছে ।
Ø প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাডারের চাকুরীর পছন্দক্রম বিবেচনায় এটির ফলপ্রসূতা অনিশ্চিত ।
Ø ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি একটি কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া ।
কোটার ঐতিহাসিক  পটভূমি বা বাংলাদেশে  কোটাপদ্ধতির উদ্ভব ও বিকাশঃ
কোটা প্রথা কেন  আসল?  স্বাধীনতার পর  থেকেই দেশের  অনগ্রসর শ্রেণীকে  সুবিধা দিয়ে সমতা  বিধানের  লক্ষ্যে  কোটার  প্রবর্তন করা  হয়। ৫ সেপ্টেম্বর  ১৯৭২ এক  নির্বাহী  আদেশে  বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি, প্রতিরক্ষা, আধা-সরকারি, এবং  জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানে কোটা  পদ্ধতি চালু হয়।  তখন  সরকারি  চাকরিতে  মুক্তিযোদ্ধা ৩০%, জেলা ৪০%, যুদ্ধবিধ্বস্থ নারী ১০% এবং মেধায় ২০%  কোটা ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স করা হয় ৩২ বছর। এরপর বিভিন্ন সময়ে  তা পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬ সালে জেলা কোটা ২০% কমিয়ে মেধা কোটা  ৪০% করা হয়। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও  সার্ভিস  কমিশনের  একজন বাদে  বাকি সদস্যরা সরকারি  নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার বিরোধীতা করেন। কোটার  পক্ষে অবস্থান নেয়া এম এম   জামান প্রচলিত  কোটাগুলো প্রথম  ১০  বছর বহাল  রেখে  ১৯৮৭ সাল থেকে  পরবর্তী  ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে  তা  বিলুপ্ত  করার  পক্ষে  মত  দেন। ২৮ জ্যলাই ১৯৮৫, মেধা ৪৫%, নারী ১০%, জেলা ১০%, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫% এবং মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০% কোটা নির্ধারন করা  হয়। ২১ মার্চ ১৯৯৩ সালে দেশের ৬৪ জেলার জন্য কোটার শতকরা হার সংশোধন করা হয়। ১৭ মার্চ  ১৯৯৭ পরিপত্র জারি  করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা  বা শহিদ  মুক্তিযোদ্ধার পুত্র ও কন্যার ক্ষেত্রে কোটা  সুবিধা  বলবৎ করা হয়।     
২০০৮ সালে  বিশ্বব্যাংকের  সহযোগিতায় বাংলাদেশ  সরকারী  কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)  এর উদ্যোগে কোটা পদ্ধতি  নিয়ে Quota  System  for  Civil   Service  Recruitment: An Exploratory শিরোনামে ৬১ পৃষ্ঠার সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সে সমীক্ষা  কমিটির  দুই সদস্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব  ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এবং  সাবেক  সচিব  ও পরবর্তিতে পধান নির্বাচন কমিশনার কাজী  রকিবউদ্দীন আহমেদ  তাদের সমীক্ষায় সংবিধান, বিভিন্ন  আইন ও নীতিমালা  এবং অন্য দেশের তুলনামূলক অবস্থা পর্যালোচনা করে সরকারি চাকরিতে  নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অধিকাংশ কোটাকে সংবিধান ও ন্যায়নীতির পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে কোটা কমিয়ে আনার সুপারিশ করেন। সমীক্ষায় আরো বলা হয় বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে এখন ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ দেশের ৬৪ জেলার জন্য কোটার শতকরা হার সংশোধন করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ সম্ভব না হলে উক্ত পদগুলো  খালি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সাথে জেলা কোটার পদ জেলা থেকে পূরণ করা সম্ভব না হলে জাতীয় মেধা তালিকা হতে পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। ১৬ ফেরুয়ারি ২০১১ পরিপত্র জারি করে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র বা কন্যা সন্তান না পাওয়া গেলে তাদের নাতি-নাতনিকে আওতাভূক্ত করা হয়।
১২ জানুয়ারি ২০১২ অন্য একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্য ১% কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। সরকারিম স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন এবং দপ্তরে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার সর্বশেষ  জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি পদ বিতরনের হার নতুন করে নির্ধারণ করে ৫ জুন ২০১৭ নতুন পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়, ২০১১ সালে আদমশুমারির নতুন রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায়, বিভিন্ন জেলার জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি এবং নতুন করে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলাওয়ারি পদ বিতরনের শতক্রা হার সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে ২০০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ জেলাওয়ারি কোটা সংক্রান্ত পরিপত্র  বাতিল  হয়ে যায়। ৬ মার্চ ২০১৮ কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে, তা মেধা তালিকার ক্রমানুসারে পূরন করার পরিপত্র জারি করা হয়।
সর্বশেষ ১১ এপ্রিল ২০১৮ এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সকল ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষনা দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার শতকরা হারঃ
সরকারি চাকরিতে কোটা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত হয়েছে। কোটার ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে কোটার পরিমান কম বা বেশি হয়। আমি এখন ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিতী বিভিন্ন কোটার শতকরা হার তুলে ধরার চেষ্টা করব
কোটার নাম
১ম শ্রেণি
১ম ও ২য় শ্রেণি
৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি
১৯৭২
১৯৭৬
১৯৮৫-২০১৮
১৯৯৭-২০১৮
মেধা
২০
৪০
৪৫
_
মুক্তিযোদ্ধা
৩০
৩০
৩০
৩০
যুদ্ধবিধ্বস্ত নারী
১০
১০
_
_
জেলা
৪০
২০
১০
৩০
নারী
_

১০
১৫
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী
_

০৫
এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী
_

_
১০
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্য
_

_
১০
মোট
১০০
১০০
১০০
১০০
[সূত্রঃ জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় , ১৬ই জানুয়ারী, ২০১৮ ]

বাংলাদেশের বর্তমান জেলা কোটার চিত্রঃ
বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটাধারী জেলা হল ঢাকা। ঢাকার জেলা কোটার পরিমান হল ৮.৩৬%। আর সবচেয়ে কম কোটাধারী  জেলা হল বান্দরবান আর এর পরিমান হল ০.২৭%। আমি এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জেলা কোটার বর্তমান পাওয়া তথ্যমতে আসল চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করব।
ঢাকা  বিভাগের  জেলা কোটার  চিত্রঃ
ঢাকা বিভাগ-২৫.২৯%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
ঢাকা
৮.৩৬%
টাঙ্গাইল
২.৫০%
গাজীপুর
২.৩৬%
নারায়নগঞ্জ
২.০৫%
কিশোরগঞ্জ
২.০২%
নরসিংদী
১.৫৪%
ফরিদপুর
১.৩৩%
মুন্সিগঞ্জ
১.০০%
মানিকগঞ্জ
০.৯৭%
গোপালগঞ্জ
০.৮১%
মাদারীপুর
০.৮১%
শরিয়তপুর
০.৮০%
রাজবাড়ী
০.৭৩%

চট্টগাম বিভাগের কোটার চিত্রঃ

চট্টগ্রাম বিভাগ-১৯.৭৩%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
চট্টগ্রাম
৫.২৯%
কুমিল্লা
৩.৭৪%
নোয়াখালী
২.১৬%
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
১.৯৭%
চাঁদপুর
১.৬৮%
কক্সবাজার
১.৫৯%
লক্ষ্মীপুর
১.২০%
ফেণি
১.০০%
খাগড়াছড়ি
০.৪৩%
রাঙ্গামাটি
০.৪১%
বান্দরবান
০.২৭
রাজশাহী বিভাগের জেলা কোটার চিত্রঃ
রাজশাহী বিভাগ-১২.৮৩%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
বগুড়া
২.৩৬%
সিরাজগঞ্জ
২.১৫%
নওগা
১.৮১%
রাজশাহী
১.৮০%
পাবনা
১.৭৫%
নাটর
১.১৮%
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
১.১৪%
জয়পুরহাট
০.৬৩%
খুলনা বিভাগের জেলা কোটার চিত্রঃ

খুলনা বিভাগ-১০.৮৯%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
যশোর
১.৯২%
খুলনা
১.৬১%
সাতক্ষীরা
১.৩৮%
কুষ্টিয়া
১.৩৫%
ঝিনাইদহ
১.২৩%
বাগেরহাট
১.০২%
চুয়াডাঙ্গা
০.৭৮%
মাগুড়া
০.৬৪%
নড়াইল
০.৫০%
মেহেরপুর
০.৪৫%

বরিশাল বিভাগের জেলা কোটার চিত্রঃ

বরিশাল বিভাগ-৫.৭৮%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
বরিশাল
১.৬১%
ভোলা
১.২৩%
পটুয়াখালী
১.০৭%
পিরোজপুর
০.৭৭%
বরগুনা
০.৬২%
ঝালকাঠি
০.৪৭%
সিলেট বিভাগের কোটার চিত্রঃ

সিলেট বিভাগ-৬.৮৮%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
সিলেট
২.৩৮%
সুনামগঞ্জ
১.৭১%
হবিগঞ্জ
১.৪৫%
মৌলভীবাজার
১.৩৩%

রংপুর  বিভাগের জেলা কোটাঃ

রংপুর বিভাগ- ১০.৯৬%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
দিনাজপুর
২.০৮%
রংপুর
২.০০%
গাইবান্ধা
১.৬৫%
কুড়িগ্রাম
১.৪৪%
নীলফামারী
১.২৭%
ঠাকুরগাঁও
০.৯৭%
লালমনিরহাট
০.৮৭%
পঞ্চগড়
০.৬৯%


ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা কোটার চিত্রঃ

ময়মনসিংহ বিভাগ-৭.৬৩%
জেলার নাম
জেলা কোটার শতকরা হিসাব (%)
ময়মনসিংহ
৩.৫৫%
জামালপুর
১.৫৯%
নেত্রকোণা
১.৫৫%
শেরপুর
০.৯৪%




কোটার ভিত্তিতে যারা নিয়োগ দেয়ঃ
বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, বিভাগ এবং এর অধীন সংস্থাগুলো চাহিদার পরিপেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) মাধ্যমে ৮ম, ৯ম ও ১০-১২ গ্রেডের অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে। সরকারি চাকরিতে বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন কোটা প্রয়োগ করে নিয়োগ দেয়া হয় ৫৫%।
আর মেধায় নিয়োগ দেয়া হয় মাত্র ৪৫%। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি -নাতনি) ৩০%, নারী ১০%, জেলা ১০% ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫%।

বিদ্যমান কোটা সমূহের মধ্যে কোনো কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১% পদে প্রতিবন্ধি নিয়োগের বিধান রয়েছে। আর ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, বিভাগ এবং এর অধীন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে। কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো সংরক্ষন করতে হয়।
জনপ্রশাসনে অনুমদিত ও শুন্য পদঃ
জনপ্রশাসনে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৭,০১,৭১৪ টি। এর বিপরীতে বর্তমান কর্মরত আছেন। ১৩,৪২,৪৫৩ জন।

আর সরকারী চাকরিতে ৩,৫৯,২৬১ টি পদ শুন্য রয়েছে।
শ্রেণি
গ্রেড
শূন্য পদ
প্রথম
৯ থেকে তদূর্ধ্ব
৪৮,২৪৬
দ্বিতীয়
১০ম-১২তম
৫৪,২৯৪
তৃতীয়
১৩-১৭ তম
১,৮২,৭৩৭
চতুর্থ
১৮-২০ তম
৭৩,৯৮৪
[সূত্রঃ জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় , ১৬ই জানুয়ারী, ২০১৮]
বাংলাদেশ  বনাম ভারত কোটা পদ্ধতিঃ
ভারতে সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় কোটা পদ্ধতি বিদ্যমান। দেশটিতে জাতীয়ভাবে  মোট ৩ ধরনের কোটা রয়েছে উপজাতি কোটা ৭.৫%, জাতভিত্তিক কোটা ১৫% এবং অন্যান্য অনগ্রসরদের জন্য ২৭% সহ মোট ৪৯.৫% কোটা রাখা হয়েছে। তবে বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু কোটা রয়েছে। ভারতে ৪৯.৫% কোটা থাকলেও এর রয়েছে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। একটি পরিবারের মাত্র একজনই কোটা সুবিধা গ্রহন করতে এবং যদি কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য কোটা গ্রহন করে তবে সে চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।
অপরদিকে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন কোটা প্রয়োগ করে নিয়োগ দেয়া হয় ৫৫%। আর মেধায় নিয়োগ দেয়া হয় মাত্র ৪৫%। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি -নাতনি) ৩০%, নারী ১০%, জেলা ১০% ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) ৫%। বিদ্যমান কোটা সমূহের মধ্যে কোনো কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১% পদে প্রতিবন্ধি নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে মূল  কথা  হল  বাংলাদেশে ভারতের  মত  সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে পুরো কোটা সিস্টেমটি  একটি  বিশৃংখল  পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
সংবিধানে কোটার বিধানঃ
সরকারী নিয়োগ লাভের সমতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে যে বিধান গুলো আছে তা মূলত সমতা লাভের উদ্দ্যেশে করা হয়েছে।
নিম্নে বিধান গুলো দেওয়া হলঃ
Ø ২৯ (১) এ বলা হয়েছে যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থকিবে।
Ø ২৯ (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।
Ø ২৯ (৩) এই অনুচ্ছেদে তিনটি বিষয়ের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলঃ  (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ  বিধান প্রনয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মিয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানী উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষনের  বিধান- সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরুপ যে কোন শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষন করা হইতে,
রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
সংবিধানের ২৯ (১) ও (২) অনুচ্ছেদ বলে,
১ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে
২ কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেইক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না ।
সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদ বলে,
নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রনয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না ।
কাজেই ২৮ (৪) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারে ফেলে দিয়ে তাদের ৩০% কোটা প্রদান সংবিধানসম্মতও নয় । ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩ তম বিশেষ বিসিএস অনুষ্ঠিত হয়েছিল । আবেগী দৃষ্টিকোণ থেকে এটাও মেনে নেয়া যায় । কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বংশের সকলের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ৩০% কোটার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা
কোটা সংস্কারের আন্দোলন এবং  এর  যৌক্তিকতাঃ
কোটা সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছে তরুণদের একটি বড় অংশ। তাঁদের দাবি, বিদ্যমান কোটাপদ্ধতিতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। এটি করা না হলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন। বিভিন্ন গবেষণা, সুপারিশেও বলা হচ্ছে, বর্তমান বাস্তবতায় সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কার জরুরি।
বর্তমানে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। ফলে ১০০ জন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা থেকে নিয়োগ হয় ৫৬ জন। অবশিষ্ট ৪৪ জনকে নেওয়া হয় মেধা থেকে। আর যদি কোটা থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যায়, তাহলে তা শূন্য রাখা হয়। ফলে স্বপ্নের কাছাকাছি এসেও কোটার কারণে ছিটকে পড়তে হয় মেধাবীদের।
জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিসিএসে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাঁদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রয়েছে ১ শতাংশ, যা পূরণ করা হয় সাধারণত ওপরের যেকোনো একটি কোটা থেকে। অর্থাৎ কোনো কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখান থেকে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হয়।
বর্তমান বাস্তবতায় কোটা সংস্কারপন্থীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া, শুধু কোটাকেন্দ্রিক বিশেষ পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে কোটার পক্ষে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা যেকোনো নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলিমিনারি (প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা) থেকে কোটাব্যবস্থা চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, বর্তমানে ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। চাকরিতে এই কোটাব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার করা উচিত। প্রথমত, জেলা কোটা উঠিয়ে দিয়ে বিভাগীয় কোটা চালু করলে এমনিতেই অনেক মেধাবী চলে আসবে। আর মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতিসহ অন্যান্য কোটা সার্বিক মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, বিভাগীয় কোটার ভিত্তিতে নয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে পারে। তবে অনগ্রসর হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেবল যাঁরা ভাতা পান, দুস্থ হিসেবে যাঁদের সরকারিভাবে বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সন্তানদের জন্য কোটা থাকতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোটা রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। আরেকটি সুপারিশ হলো কোটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের কোটা যেমন চিরস্থায়ী ভিত্তিতে করা হয় না, এটাও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য করা হয়। প্রত্যেক কোটারই নির্দিষ্ট সীমা থাকবে। সে জন্য পাঁচ বছর পরপর কোটা পর্যালোচনা করা উচিত।
পিএসসি সূত্র জানা গেছে, কোটার প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১৩ জনের পদ শূন্য ছিল। একইভাবে ২৯তম ৭৯২ জন, ৩০ তম ৭৮৪ জন, ৩১ তম ৭৭৩ জন, ৩৫ তম-তে ৩৩৮ জনের পদ শূন্য ছিল। এই শূন্য পদ না রেখে সেখানে মেধা থেকে প্রার্থী নিয়োগের দাবি তাঁর।
ব্যাংকে নিয়োগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকের চাকরিতেও একই কোটা সংরক্ষণ করা হয়। ফলে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই পদগুলো শূন্য রাখা হয়।
সূত্র বলছে, কোটা থাকায় ব্যাংকে প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে শত শত প্রার্থীর পদ খালি থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষও এ বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাদের মত, কোটা থেকে প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেটা মেধা থেকে নিয়োগ করা গেলে মেধাবীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি রাষ্ট্রের সরকারি ব্যাংকগুলোতেও জনবলসংকট দূর হবে।
কোটা সংস্কার সম্পর্কে প্রধান মন্ত্রী সংসদে যা বললেনঃ
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কথা বলেছেন। সরকারদলীয় সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনা হলো, একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ দিল, কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি দায়িত্ব দিলাম। তারা সে সময়টা দিল না। মানি না, মানব না বলে তারা যখন বসে গেল, আস্তে আস্তে সব তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো। খুব ভালো কথা, সংস্কার সংস্কার বলে...সংস্কার করতে গেলে আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই সংস্কার। আর কোটা না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন ধরে ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্লাস বন্ধ। পড়াশোনা বন্ধ। এরপর আবার ভিসির বাড়ি আক্রমণ। রাস্তাঘাটে যানজট। মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন? এই বারবার কষ্ট বন্ধ করার জন্য, আর বারবার এই আন্দোলনের ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটাপদ্ধতি বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলো বাতিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব দুঃখ লাগে যখন দেখলাম, হঠাৎ কোটা চাই না। কোট সংস্কারের আন্দোলন। আন্দোলনটা কী? লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় বসে থাকা। রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা। এমনকি হাসপাতালে রোগী যেতে পারছে না। কর্মস্থলে মানুষ যেতে পারছে না। লেখাপড়া-পরীক্ষা বন্ধ করে বসে আছে। এ ঘটনা যেন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমিই গড়ে তুলেছিলাম। আজকে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, যা কিছুই ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো তো আমাদেরই করা। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেব, সে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু গঠনমূলক কাজে ব্যবহৃত না হয়ে সেটা গুজব ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাত একটার সময় হলের গেট ভেঙে মেয়েরা বেরিয়ে এল। শুধু একটি গুজবের ওপর। সে ছেলে যখন বলল আমি মরি নাই, বেঁচে আছে, তখন তাদের মুখটা থাকে কোথায়। এই স্ট্যাটাসটা কে দিল? কেন দেওয়া হলো। এই যে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে, অঘটন ঘটলে কে দায় নিত। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। আমরা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সব আন্দোলনে সেখানে ছিলাম। স্কুলকলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি আন্দোলন করতে। কখনো ভিসির বাড়িতে গিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাঙচুর করতে পারে, সে ভাঙচুরটা কী?
তিনি বলেন, মেয়েরা যে এত রাতে হল থেকে বেরিয়ে এল। মাননীয় স্পিকার, আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি বারবার ফোন করেছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে পাঠিয়েছি। সে ওখানে গেল। প্রেসকে বলল। আলোচনা করল। তারপরও তারা কোনো কিছু মানল না। এমনকি ঢাকার বাইরে সবাই রাস্তায় নেমে গেল। কী, কোটা সংস্কার। এ দাবি একবার না আরও অনেকবার এসেছে। আমরা একটি নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আমাদের ছেলেমেয়ে যারা করছে, আমাদের ছেলেমেয়ে কেন, অনেকে আমার নাতির বয়সী। তাদের কিসে মঙ্গল হবে না হবে, আমরা কি বুঝি না? ১৯৭২ সাল থেকে এ কোটাপদ্ধতি চলছে। সময়-সময় সংস্কার করা হয়েছে। কোটা যাই থাক, সব সময় কোটা পূরণ হয় না। যে তালিকা থাকে, সেখান থেকে তাদের চাকরি দিয়ে দিই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৩তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ৭৭.৪০ শতাংশ নিয়োগ পেয়েছে। ৩৫তম ৬৭.৪৯, ৩৬তম ৭০.৩৮ ভাগ। মেধাবীরা বাদ যায়নি। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার থেকে পূরণ করা হচ্ছে। সবাই মেধাবী। রিটেনে পাস করতে হয়। বিসিএস যারা দেয়, তারা সবাই মেধাবী। কোটায় যারা, তারাও একসঙ্গে পরীক্ষা দেয়। রিটেনে তাদের পাস করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের একটি দাবিতে বলা আছে, যেখানে কোটায় পাওয়া যাবে না, মেধা থেকে দেওয়া হবে। এটা তো হচ্ছে। আমার দুঃখ লাগে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো প্রফেসর বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, তাঁরা আবার একই সুরে কথা বলছেন। তাঁরা দেখেনই নাই আমরা মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিচ্ছি। না হলে ৭৭ ভাগ কোথা থেকে। কোটায় যারা পাচ্ছে, তারাও মেধাবী। তার মানে শতভাগ মেধাবী। তারপরও আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা চায় না, তাহলে দরকারটা কী। কোটাপদ্ধতিরই দরকার নেই। যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, তাদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। এই আন্দোলন যারা করেছে, যথেষ্ট হয়েছে, এখন তারা ক্লাসে ফিরে যাক। ভিসির বাড়ি যারা ভেঙেছে, লুটপাট করেছে, লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছে, ছাত্রদেরই তো বের করে দিতে হবে। যারা ভাঙচুরে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ছাত্রশিক্ষকের সহযোগিতা চাই। এত বড় অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না। এখনো শিক্ষক যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের সম্মান করি। গুরুজনকে অপমান করে প্রকৃত শিক্ষা হয় না।
মেধা বড় নাকি কোটা? ভ্রান্তি ও বাস্তবতাঃ

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বুয়েট থেকে পাস করেছেন, এ রকম এক প্রকৌশলী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, তাঁর ব্যাচের পাঁচ শ শিক্ষার্থীর মধ্য এখন দেশে আছেন মাত্র শ-খানেক। অন্যরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন হয়তো বৃত্তি নিয়ে প্রথম সুযোগে দেশ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু বাকিরা-বন্ধুর ভাষ্যমতে, দেশে থেকেই নিজের ভাগ্য গড়তে এবং জনগণের সেবা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে তাঁরা বিদেশে চলে গেছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা প্রকৌশলীদের সমান না হলেও একেবারে কম নয়। কেবল চিকিৎসক বা প্রকৌশলী নন, অর্থনীতির ভাষায় যাঁদের আমরা দক্ষ জনশক্তি বলি তাঁদের একটা বড় অংশই বিদেশমুখী। সমাজের অর্ধেক নারী। তাদের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে। কিন্তু অন্যান্য অংশের জন্য নির্ধারিত কোটার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। অথচ সরকার তার অবস্থানে অনড়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। এই পরিকল্পনা না থাকাটাও একটি পরিকল্পনা এবং সেটি হলো প্রশাসনে মেধাবীদের প্রবেশ সীমিত করা। কোটা চালু করা হয়েছিল অসুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া, পিছিয়ে পড়াদের সামনে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটার নামে এখন মেধাবীদের পিছিয়ে রাখার যে কৌশল সরকার নিয়েছে, তা আত্মঘাতী।
কিন্তু মূল সমস্যাটি রয়েই গেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যে নিয়োগ দিচ্ছে, সেখানে মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামানও শিক্ষার্থীদের এই দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন। প্রথম আলোতেই এক লেখায় সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন লিখেছেন, অন্তত ৭০ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোটা মেধাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। আমরা পারছি। অর্থাৎ উল্টো যাত্রায় প্রথম।সরকার যদি সত্যি সত্যি মেধাবীদের দেশে রাখতে চায়, যদি তারা দেশ পরিচালনার জন্য একটি দক্ষ প্রশাসন গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়, তাহলে কোটার নামে মেধাবীদের বঞ্চিত করার পথ ছাড়তেই হবে।
                          




কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
কোটা বনাম মেধা বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে বেশ কিছুদিন যাবত। আমার মনে হয় উর্ধ্বকমা যুক্ত শব্দত্রয়ীর মাঝের বনাম শব্দটিই আসলে যত বিতর্কের মূলে। বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে ওই একটি শব্দই। এই শব্দটির কারণেই কোটা থাকা মানেই মেধাহীন এবং কোটা না থাকা মানেই মেধাবী এমন একটা অমূলক ধারণা কতিপয়ের মাঝে বদ্ধমূল হতে শুরু করেছে।
আমরা মেধাবী, আমরা মেধাবী বলা অনেককেই দেখেছি কতটা অন্ত:সারশূন্য। পরীক্ষার আগের রাতে হাতে প্রশ্ন ধরিয়ে দিলেও পাস করে আসতে পারবে কিনা সন্দেহ। আবার কোটা সুবিধা পাওয়া অনেককেই দেখেছি তাদের কোন সুবিধা না দেওয়া হলেও তারা নিজের যোগ্যতায়ই যে কোন পরীক্ষায় উৎরে যাবেন।
কোটা সংস্কারের কথা উঠলেই কথিত মেধাবীরা অযথা কোটা সুবিধা পাওয়াদের আক্রমন করে নিজেদের যৌক্তিক দাবিকেই বরং বিতর্কিত করে তোলে। আর নিজেদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেয় কোটাসুবিধার আওতায় থাকার কারণে অনেক প্রকৃত মেধাবীরাও অযথা আক্রমন হজম করতে বাধ্য হন।

আরেকটা পক্ষ আছে যারা কিছু না জেনে না বুঝেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেয়। যেটা আসলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকৃত অবস্থা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার কূটকৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে সিস্টেমটিকে হতে হবে ডায়নামিক। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনর্মূল্যায়ন করে দেখতে হবে যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে আসলে এটা কতটা কাজে আসছে বা আসলেই অনগ্রসর শ্রেণি সুবিধাটা পাচ্ছে কিনা, নতুন করে কেউ এই সুবিধার আওতায় আসতে পারে কিনা, সুবিধাপ্রাপ্ত কোন জনগোষ্ঠীর এ সুবিধা নেওয়ার প্রয়োজনীতা ফুরিয়েছে কিনা ইত্যাদি। কিন্তু স্থায়ী রূপে এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকলে উল্টোপথে আবার নেগেটিভ ডিসক্রিমিনেশনও তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে এটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষোভেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এই টার্মের সঙ্গে সম্পূরক একটি প্রশ্ন এমন যে, কোটা সুবিধা নিয়ে একজন সচিব হয়েছেন। এখন তার ছেলেও কোটা সুবিধা পাচ্ছেন। তার মানে কি পদসোপানের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছেও তিনি অনগ্রসর শ্রেণিতেই রয়ে গেছেন?
সুতরাং সরকারের কাছে অনুরোধ, গণদাবিতে পরিণত হওয়া তারুণ্যের আন্দোলনের প্রতি ন্যুনতম নজর দিয়ে হলেও কোটা সংস্কারে হাত দিন। তখন বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণে যদি মনে হয় কোন কোন ক্ষেত্রে কোটা আরও বাড়ানো উচিত তবুও হাত দিন। তাতে তারুণ্যের চাওয়া এবং রাষ্ট্রযন্ত্র উভয়ই উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
নারী কোটাঃ
আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিভিন্ন প্রকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এরূপ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি-আধা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নির্ধারিত কোটা সংরক্ষণের বিধান করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৪৫ শতাংশ পদ মেধা কোটায় নির্বাচনের পর অবশিষ্ট পদের জন্য অন্যান্য কোটার সঙ্গে ১০ শতাংশ নারী কোটা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটায় নির্বাচনের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটায় নির্বাচনের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এতে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ নয় বরং ভিন্ন পন্থা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। সব শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগের বিধিতে নারীদের কেবল মেধায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ পাওয়ার বিধান রেখে
কোটা সংরক্ষণ-ব্যবস্থা বিলোপ করার বিষয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন। কারণ, এত এত কোটার কারণে দেশের মেধাবীরা একসময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাকরি করতে পারবেন না, এতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এটা আমাদের রাষ্ট্রের জন্য মোটেও ভালো হবে না।


কোটা ব্যবস্থার সুফলঃ


দেশে সর্ব ক্ষেত্রে সমতা অর্জনের জন্য কোটাকে বাদ দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এমনকি সমতা সাম্যতা  অর্জন করার জন্য কোটার গুরুত্ব অনশিকার্য।কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন তাই বলে অযৌক্তিক হয়ে যায়নি। কোটাধারীদের সুবিধার জন্য এবার চরম বৈষম্যমূলকভাবে দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেই গণহারে বাতিল করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সংগত কারণে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ ছাত্ররা। শাহবাগে তাদের জমায়েত দেশের বহু মানুষের সহানুভূতি অর্জন করেছে। এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলতে থাকলে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ত, পড়তে শুরুও করেছিল। সিটি করপোরেশনগুলোতে শোচনীয় পরাজয়ের পর সরকারের জন্য তাতে নতুন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই পুলিশ আর ছাত্রলীগ একসঙ্গে লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করেছে। আগের রাতে হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে অংশ নিলে পিটিয়ে হলছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সরকারের দমননীতির অনিবার্য হাতিয়ার হিসেবে অবশেষে এই আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন মেধাবী ছাত্র।
সরকারের দমননীতি ও কোটাকেন্দ্রিক বৈষম্যকে যৌক্তিকতা প্রদানের জন্য কোটা বাতিলের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে শেয়ারবাজারের লুটপাট, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কিংবা ভারতের প্রতি নতজানুমূলক আচরণসহ সরকারের বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদেরও একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসেবে ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এমন সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা বহু বছর ধরে চলছে সমাজে। অথচ নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। ঢালাও কোটার নামে অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও অবিচার মেনে না নেওয়া। ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বৈষম্যের অনেকটা ফয়সালা আমরা অর্জন করতে পেরেছিলাম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে। কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য এর পরও বেড়েছে দিন দিন। এই বৈষম্যের সবচেয়ে উৎকট প্রকাশ ঘটত উন্নয়ন বাজেট ও সরকারি চাকরিতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্যে। বাঙালিদের মেধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে অধিকাংশ নিয়োগ দেওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। ছয় দফার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে এসব তথ্য-উপাত্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ক্ষোভকে সংগঠিত করতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে প্রণীত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে আমরা তাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান লক্ষ করি। ১৯৭২ সালের সংবিধানে অন্তত ছয়টি বিধানে সমতা ও বৈষম্যহীনতা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা আছে। সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা, ২৮ অনুচ্ছেদে বৈষম্যহীনতা এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে সব নাগরিকের সুযোগের সমতার কথা বলা আছে। অবশ্য ২৮ অনুচ্ছেদে নারী, শিশু ও নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।
১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে অকাট্য দলিল। এই দলিল অনুসারে নারী কিংবা সমাজের অনগ্রসর শ্রেণী হিসেবে উপজাতিদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কোটা থাকতে পারে। কিন্তু সেটি তত দিনই থাকা সংগত, যত দিন সরকারি চাকরিতে তাঁদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হয়। আবার সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদ নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য চাকরিতে বিশেষ কোটা প্রদান অনুমোদন করেছে, অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য নয়। ফলে জেলা কোটার সাংবিধানিক ভিত্তি সন্দেহজনক।
১৯৭২ সালের সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সম্পর্কে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কিছু বলা নেই। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল যে গণপরিষদে, তার বিতর্কের দলিল অনুসারে ২৮ বা ২৯ অনুচ্ছেদ প্রণয়নের আলোচনকালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা (যেমন কোটা) প্রদানের কথা উত্থাপিত হয়নি। কেবল সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় (বাংলাদেশ গণপরিষদের বিতর্ক, সরকারি বিবরণী, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৭২, পৃষ্ঠা ৪৭০-১)
সামাজিক নিরাপত্তার উদার ব্যাখ্যা করলে পঙ্গু বা নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বৈধ হতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর শ্রেণী বলে বিবেচিত হতে পারেন না বলে তাঁদের জন্য ঢালাও কোটা সংরক্ষণ

কোটা ব্যবস্থার কুফলঃ
এই কোটা পদ্ধতির সবচে বড় সমস্যা হচ্ছে মেধার অবমূল্যায়ন। আপনি মেধাবী হতে পারেন। প্রতিটি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সফলতার স্বাক্ষর রেখে ছাত্রজীবনের ইতি টানতে পারেন। তাই বলে আপনি সহজে চাকরি পাবেন ভেবেছেন? আপনার যোগ্যতা বলে আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার পছন্দ কিংবা অপছন্দের সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না। সফলতার সাথে ছাত্রজীবন শেষ করা আপনার দায়িত্ব ছিল। এখন রাষ্ট্র আপনার জন্য আরও কিছু বাড়তি দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিবে। আপনার পিতা কিংবা দাদা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? যদি উত্তর না হয় তবে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৩০% হারালেন।
আপনি যদি নারী না হন তবে আরও ১০% হারালেন। যদি আপনি দেশের ২১টি বিশেষ জেলার জন্মগ্রহণ না করে থাকেন তবে আরও ১০% হারালেন। সর্বশেষ আপনি যদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা আদিবাসিদের অন্তর্ভুক্ত না হন তবে আরও ৫% হারালেন। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ সম্মানের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি মাত্র ৫৫% সম্ভাবনা হারিয়েছেন! ভাবছেন আপনার যে মেধা তা দিয়ে বাকি ৪৫% বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়ে আপনি ঠিকই আপনার অবস্থান তৈরি করতে পারবেন। এখানেও কিছু গোপন কথা আছে। মাত্র ৪৫% সুযোগের মধ্যে আপনাকে আরও কিছু সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৫৫% অধিকার আপনার কাছ থেকে রাষ্ট্র কেড়ে নিলেও বাকি ৪৫% রাষ্ট্র কেড়ে নিচ্ছে না। প্রথা, স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিকতা এখানে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে। আপনি সহজ কিছু প্রশ্নের উত্তর না মিলাতে পারলেই আপনার কপালে চাকরি জুটছে না।
সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪১ বছর শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা কোটা পদ্ধতির সুযোগ পেলেও দুই বছর পূর্বে নবম জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নয় বরং তাদের নাতি-নাতনিরাও কোটা পদ্ধতির আওতায় পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর সে ঘোষণানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীরা চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রাষ্ট্রের আইন। একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তা মেনে নেয়া আবশ্যক। কিন্তু দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী কয়েকবছরের মধ্যে ৪০ ঊর্ধ্বদের সকলে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেলেও বিস্মিত হওয়ার সুযোগ থাকবে কি? ২০১৪ সালের ৮ মে দৈনিক সংবাদে প্রকাশ পায়, ফেনী জেলায় ৪ হাজার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তারা রাষ্ট্রের আর্থিক সুবিধাসহ সকল সুবিধা গ্রহণ করছে। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে ৬০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। একই সমাবেশে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এদের চিহ্নিত করে সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।
২০০১-০৬ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ জনে। ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যে আরও বেড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৪৩ বছর পূর্বে দেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও মুক্তিযোদ্ধার জন্ম এখনও শেষ হয়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটার কাঁটা
চাকরিপ্রত্যাশী মেধাবীদের মধ্যে সরকারি চাকরির প্রতি, তা যতই নিম্ন পদের হোক না কেন, একধরনের মোহ বা  আগ্রহ আমাদের সমাজে দীর্ঘ দিন ধরে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ইত্যাদির পাশাপাশি বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার কারণে লাখো তরুণের চাকরি লাভের লালিত স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বলতে গেলে কোটা ব্যবস্থাই এখন মেধাবীদের সরকারি চাকরি লাভের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে যখন দেখি, ক্লাসের পেছনের সারির কোনো ছাত্র কোটার বলে বলীয়ান হয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী হয়েও বিসিএস বা বড় কোনো চাকরি বাগিয়ে নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়; অন্য দিকে মেধাবী ছাত্র পরীক্ষায় ভালো করেও কোটার বলি হয়ে প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে দুর্বিষহ বেকার জীবন পার করে, নীরবে অশ্রু ফেলে তখন ব্যথিত, উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। এ কোন দেশে আমরা বাস করছি, যে দেশে যথাযথ মেধার মূল্যায়ন হয় না।
বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি, ৩৪তম প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ফলাফল বাতিল ও পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে । তাদের প্ল্যাকার্ডের শ্লোগানগুলি ছিলঃ
Ø কোটা মেধাবীদের সুইসাইড স্কোয়াড
Ø কোটা অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই
Ø দাবি শুধু একটাই, কোটামুক্ত দেশ চাই
ঢাকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে । তারা শাহবাগ এলাকা অবরোধ করে পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে তোলে । ১০ জুলাই এ শিক্ষার্থীরা দিনভর সড়ক অবরোধ করলে পিএসসি ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল পুন:বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু পিএসসির সিদ্ধান্ত জানার পর বঞ্চিত শিক্ষার্থী ব্যানারে এ আন্দোলনকারীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলকে তাদের প্রধান দাবি হিসেবে তুলে ধরে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেয় । দাবি আদায়ে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত তারা শাহবাগ অবরোধ করে অবস্থান করে ।
এর পর শাহবাগে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে গতকাল বুধবার বিকালে সদ্য প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পুন:বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) । গণদাবীর মুখে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ৩৪তম বিসিএসের প্রাথমিক পরীক্ষার ফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে ।
কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে সুধিজনদের অভিমতঃ
কোটাপদ্ধতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন,
আমরা কোটা করার পরও মহিলারা পিছিয়ে আছেন । আমি তো মনে করি মহিলাদের জন্য কোটা আরো বৃদ্ধি করা উচিত। আর পার্বত্য অঞ্চলে যারা আছেন গারো, মারমা, ত্রিপুরা অন্যান্য যারা আছেন এদেরকেও তো উঠিয়ে আনতে হবে। এটাতো অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। অন্যান্য দেশেও আছে। সবই যদি মেধার ভিত্তিতে হয় তাহলে পিছিয়ে যারা, অবহেলিত যারা আছেন তারাতো কোনদিনই আসতে পারবেন না। জনগণের মধ্যে যে একটা বৈষম্য, যেটা আগে ছিল সে বৈষম্যটা দূর করাই সরকারের উদ্দেশ্য। সাম্য নয় সমতামূলক কোন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এটা রাখা হয়েছে। আমি কোটার সম্পূর্ণ পক্ষে।
প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কোটা প্রথাকে পূর্ণ সমর্থন করলেও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ আকবর আলি খান ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় ৫৫% কোটাকে অমানবিক উল্লেখ করে এর যৌক্তিকীকরণের কথা বলেন । তিনি স্পষ্টভাবে বলেন,
The recruitment under quota must not be higher than that of merit.
তিনি আরও বলেনঃ
“It gives people an impression that less efficient people get appointments through the quota system and thus the quality of public administration drops.”
মানবজমিন পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে পিএসসির চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী বলেন,
বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতি সরলীকরন করা প্রয়োজন ।
পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এস এম ফায়েজ বলেন,
সরকারী চাকুরীতে মেধাকে সবচে গুরুত্ব দেয়া উচিত । কেননা, মেধাবীরাই একসময় দেশের নেতৃত্ব দেবে । মেধাবীরা সরকারী চাকুরীতে আসলে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরী হবেযেভাবেই হোক না কেন, মেধার কোন বিকল্প নেই । মেধাকে যত প্রাধান্য দেয়া হবে তত বেশী আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,
এদেশে এক ধরনের গোষ্ঠী আছে যারা চায় যে সরকারী নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে কোটা থাকুক । আমি মনে করি না যে সব ধরনের কোটা এখন দরকার আছে । কিছু কোটা থাকবে কিন্তু সেসব কোটার সময় উল্লেখ করা যেতে পারে যে তা কত বছর বহাল থাকবে ।
ড আকবর আলি খানের রিপোর্টেও permanently or for an indefinite period কথাটি জোরালো ভাবে এসেছে । প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনদের প্রায় সকলেই একটি বিষয়ে একমত । সেটি হচ্ছে, স্বল্প সময়ে নির্ভুল একটি বিসিএস পরীক্ষার কার্যক্রম তথা নন-ক্যাডার সহ ১ম ও ২য় শ্রেনীর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল সুচারূ ও গ্রহনযোগ্য রূপে বাস্তবায়নের স্বার্থেই কোটা পদ্ধতির সরলীকরন আবশ্যক ।
উপসংহারঃ
যেকোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে- সন্দেহ নেই। এ বিবেচনায় বিশ্বের অনেক দেশ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোটাপদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে নির্বাহী আদেশে যে কোটাপদ্ধতি প্রবর্তিত হয়, সেখানেও আদেশের শুরুতেই বলা হয়েছিলÑ সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এ কোটা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু সাময়িক সময়ের কথা বলে যে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য; সামান্য কিছু সংস্কার ছাড়া তা আজো বলবৎ আছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে সমঅধিকারের কথা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সেখানে এ রকম একটি চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা দেশের জন্য কখনো মঙ্গলজনক ও কাম্য হতে পারে না। অবাক করার বিষয়, এ রকম একটি বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিপক্ষে দীর্ঘ দিনেও জোরালো কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন গড়ে উঠতে দেখা যায়নি।

তথ্যসূত্রঃ
১। প্রথম  আলো, ১৫/০১/২০১৮
২। নয়া দিগন্ত, ২৮/০৩/২০১৫
৩। দৈনিক  সংগ্রাম, ১৬/০৪/২০১৫
৪। কারেন্ট এফেয়ার্স, মে,২০১৮
৫. জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ডাটাবেজ, ১৬ই  জানুয়ারী,২০১৮





No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.